My Blog List

Sunday, March 20, 2011

ঠিকমত নামাজ না পড়া এবং সময়মত বাসায় না ফেরায় বিপদের ঝুঁকিঃ

প্রয়োজন ছাড়া শুভ রহমানের বাইরে বের হওয়া নেই বললেই চলে।বাইরে যাওয়া বলতে আছে কেবল শুভ রহমানের-স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে যাওয়া,মাঝে-মধ্যে কাঁচা বাজার করতে যাওয়া এবং যেটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সেটি হলঃবিকেল বেলা হাঁটতে হাঁটতে পৌর মার্কেটে যাওয়া।শুভ রহমান বছর ...খানেক আগেও বেশ মুটিয়ে গিয়েছিলেন এ কারণে তার হার্টের সমস্যা হয়ে গিয়েছিল।শিরায় শিরায় চর্বি জমে ব্যাথা অনুভব করতেন শুভ রহমান।একদিন তিনি ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে ডাক্তার তাকে ব্যায়াম করার পরামর্শ দিলেন।শুভ রহমান শিক্ষিত ছেলে এ কারণে তিনি জানতেন,ব্যায়ামের মধ্যে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ব্যায়াম হচ্ছে জগিং বা হাঁটা-হাঁটি।এ কারণে জগিং করার জন্য শুভ রহমান পৌর মার্কেটে যাওয়া-আসার পথকে বেঁছে নিলেন।পৌর মার্কেটে শুভ রহমানের ফুফাত ভাইয়ের দোকান,শুভ রহমানের হাইস্কুল জীবনের দুই বন্ধুর দোকান এবং শুভ রহমানের ভগ্নিপতির ছোট ভাইয়ের দোকান রয়েছে।বলতে পারেন,শুভ রহমান এই দোকান গুলোতে বসে আড্ডা দেয়।সম্পূর্ণভাবে এটিকে আড্ডা বলা যাবে না কারণ;এখানে যাওয়া-আসার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য রয়েছে।আসরের নামাজ পড়ে শুভ রহমান হাঁটতে হাঁটতে এই দোকান গুলোতে গিয়ে খানিকটা সময় বসে থাকেন এবং মাগরিবের নামাজের আগেই আবার হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফিরে শুভ রহমান মাগরিবের নামাজ আদায় করেন।১১-০৩-২০১১ইংরেজী তারিখ-আজকে এর ব্যতিক্রম হয়েছে।সকালবেলা থেকেই শুভ রহমান কেমন যেন টিভি দেখার প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন।দুপুর বেলা শুভ রহমান টিভি দেখার এক পর্যায়ে যোহরের নামাজ মিস করেছেন এমনকি আছরের নামাজের আগেই পৌর মার্কেটে গিয়েছেন এবং আড্ডাটা বেশ জমে গিয়েছিল।আড্ডা জমার মধ্যে দিয়ে কখন যে আছরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গিয়েছে সেদিকে শুভ রহমান লক্ষ্য করেননি;এদিকে মাগরিবের ওয়াক্ত টাও শেষ হয়ে যাচ্ছে সেদিকে শুভ রহমানের মনোযোগ নেই।এমন সময় হঠাৎ বাইরে থেকে ধূলা-বালি পৌর মার্কেটের ভিতরে চলে আসল।ব্যাপার কি এত ধূলা-বালি কিসের ? বাইরে গিয়ে শুভ রহমান দেখে,কাল বৈশাখীর ঝড়। চারিদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে।এমন অবস্থা দেখে শুভ রহমান বাসায় একটা ফোন করে দিলেন কারণ;শুভ রহমান সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরেন,আজকে সন্ধ্যার আগে বাসায় না ফেরার কারণে বাসায় লোকজন চিন্তা করতে পারে।কাল বৈশাখীর ঝড়ের পর বাইরে বেশ বৃষ্টি হচ্ছিল।প্রায় ঘন্টা খানেক পর বৃষ্টি থামল।এখন শুভ রহমানের বাসায় ফেরার পালা।এখান থেকে শুভ রহমান প্রতিদিনই পায়ে হেঁটে বাসায় ফেরেন।প্রায় আধ-ঘন্টা সময় লাগে বাসায় ফিরতে।আজকে আর পায়ে হেটে বাসায় ফেরা হবে না শুভ রহমানের কারণ;বাইরে বেশ ঘুটঘুটে অন্ধকার এবং বৃষ্টি নেমে রাস্তাঘাটের বারোটা বেজে গিয়েছে।বাইরে দাঁড়িয়ে শুভ রহমান ইজিবাইক টেম্পুর জন্য অপেক্ষা করছেন কিন্তু;একটা ইজিবাইক ও খালি আসছিল না কারণ;ঝড়ের পরে আটকে থাকা লোকজনের ভিড় ছিল,এখন তারা এক সাথে হন্নে হয়ে বাসায় ফিরছে।এ কারণে শুভ রহমান হেঁটে হেঁটে রাস্তার পাশ দিয়ে টেম্পু স্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলেন।বাইরে বেশ ঘুটঘুটে অন্ধকার,সতর্কতার সাথে শুভ রহমান এগুচ্ছেন কিন্তু;সতর্ক হয়ে চললে কি হবে ,রাস্তার সব ড্রাইভার কি সবসময় সতর্ক হয়ে গাড়ি চালায় ?ইস্ অল্পের জন্য শুভ রহমান প্রানে বেঁচে গেলেন।বেশ ব্যাথা পেয়েছেন শুভ রহমান-আহত হওয়ার পর্যায়ে পড়েছে।সেখানে তিনি খানিকটা সময় বসে রইলেন এবং ফুফাত ভাইকে ফোন করলেন তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়ার জন্য।শুভ রহমানকে নিয়ে তার ফুফাত ভাই বাসায় ফিরলেন।অভ্যাসের একদিনের হেরফেরের কারণে আজকে না,কি বিপদই হতে পারত শুভ রহমানের !শুভ রহমান যদি মাগরিবের নামাজের আগে পূর্বের ন্যায় বাসায় ফিরতেন তাহলে কি শুভ রহমানকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হত ?আল্লাহ শুভ রহমানকে মাফ করুণ,এমনভাবে শুভ রহমান যেন নামাজকে অবহেলা না করেন।আজকে না হয় বিপদ হয়নি,এমনভাবে যদি শুভ রহমান ক্রমাগত ভুল করেন-তাহলে পরবর্তীতে যে বিপদ হবে না তার নিশ্চয়তা কে দিবে?বিপদ গুলোর মধ্যে যেমন-এরকম ঝড়-বৃষ্টিতে আটকে গিয়ে বা রাস্তায় ছিনতাইকারী মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার বিপদ বা রাস্তাঘাটে দূর্ঘটনা জনিত  বিপদ ইত্যাদি হতে পারে।আমার এ লেখাটি বিপদগামী যুব সমাজকে লক্ষ্য করে লেখা।এই যুবরা হতে পারে আমার আপনার ভাই-বোন,আত্নীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধব বা প্রতিবেশি।তারা অকারণে বাইরে ঘোরা-ফেরা করে।এরা ঠিকমত বাসায় ফিরে না একারণে বাসার লোকজন বিভিন্ন সময়ে আতঙ্কের মধ্যে থাকে।শুভ রহমান না হয় একটি দিনের খারাপ অভ্যাসের কারণে বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন কিন্তু;বিপদগামী যুব সমাজ যারা ঘন্টার পর ঘন্টা বাইরে থাকে তারা প্রতিনিয়ত যে কোন মুহূর্তে বিপদের সম্মুখীন হতে পারে।আমাদের মধ্যে শুভ রহমানের মত একশ্রেণীর লোক আছে যারা সন্ধ্যা লাগার সাথে সাথে বাসায় ফেরে,আবার আরেক শ্রেণীর লোক আছে যারা সন্ধ্যা লাগার সাথে সাথে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়।এরা বাইরে গিয়ে কোথায় কি করে তা বাসার লোকজনের কাছে খুব একটা জানা থাকে না।এরা ঘন্টার পর ঘন্টা বাইরে থেকে রাত্রি ১১টা বা কখনো রাত ১২ টায়ও বাসায় ফেরে।এই অভ্যাস গুলো ছোটবেলা থেকে শুরু হয়ে এমন কি বিবাহিত অবস্থায়ও কন্যা-পুত্র সন্তানের বাবা-মা হয়েও রয়ে যায়।এমনি একজন লোক হচ্ছে তোরাব আলী যিনি তিন সন্তানের জনক হয়েছেন।বেশ কয়েকবার পৌর কাউন্সেলর হয়েছেন।তার এক পুত্র এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন আরেক ছেলে কলেজে এবং বাকি জন হাইস্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ে।এ থেকে বোঝা যাচ্ছে তোরাব আলীর বয়সটাতো আর কম হয়নি।তোরাব আলী সন্ধ্যা লাগার সাথে সাথে বাসা থেকে বেড়িয়ে যান এবং ক্লাবে গিয়ে আড্ডা দেন। তোরাব আলী ছোট বেলা থেকেই বাইরে বাইরে থাকতেন এ কারণে পড়াশুনায়ও তেমন একটা ভালো করতে পারেননি কোনমতে এইচ.এস.সি পাশ করেছেন এবং এই কারণে কোথাও চাকরি করতে পারেননি।তিনি বড় হয়েও এই ঘোরাঘুরির অভ্যাস রপ্ত করে চলেছেন।তোরাব আলী ক্লাব থেকে বেশ রাত করে বাসায় ফেরেন।কখনো কখনো তোরাব আলী রাত ১২টায় বাসায় ফেরেন।বাসায় এসে খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমাতে যেতে রাত ১২.৩০ বেজে যায়।এ কারণে তোরাব আলীকে গভির রাতেও ফোন করে পাওয়া যায় কারণ;১০টা কিংবা ১১টায় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে গেলে ফোন বন্ধ করে হয়ত ঘুমিয়ে যেতেন কিন্তু;১২.৩০টায় ঘুমানোর জন্য তাকে গভির রাতে ফোন করে পাওয়া যায়।অনেক লোক হয়ত তাকে ভালো চোখে দেখে,যে তাকে বিপদের সময় গভির রাতেও ফোন করে পাওয়া যায়।এই কারণেই হয়ত তিনি পৌর কাউন্সেলর হয়েছেন।কিন্তু আমার পর্যবেক্ষণে আমি বলব-তোরাব আলী লোকটি খারাপ অভ্যাসের দরুণ রাত করে বাসায় ফেরে এজন্য লোকজন গভির রাতে বিপদের সময় হয়ত তাকে পায় কিন্তু;এত রাত করে বাসায় ফেরার কারণে-তার ছেলে-পুলে এবং স্ত্রী কত না দুঃচিন্তায় সময় পার করে।তোরাব আলী লোকটি এত রাতে ক্লাবে থেকে নিশ্চয় ভালো কিছু করে না।তেমনিভাবে যুব সমাজ যারা সন্ধ্যা লাগার সাথে সাথে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় এবং কখন যে বাসায় ফেরে তার হদিস থাকে না তাদেরকে নিয়ে বাসার লোকজন কত না দুঃচিন্তায় থাকে।এ সমস্ত যুবদের ঘোরাঘুরির খারাপ অভ্যাস বাদ দেয়ার শ্রেষ্ঠ পথ একমাত্র নামাজই হতে পারে।শুভ রহমানের ছোট একটি ঘটনার মাধ্যমে তা প্রতিয়মান হচ্ছে।যথাযথ সময়ে ওয়াক্তমত নামাজ পড়ার মাধ্যমে শুভ রহমান যেমন-বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারে ঠিক তেমনি,যুব সমাজ শুভ রহমানের সঠিক সময়ে নামাজ পড়ার অভ্যাস রপ্ত করার মাধ্যমে ঘোরাঘুরির অভ্যাস থাকলেও তারা সঠিক সময়ে বাষায় ফিরতে পারে।তাই শুভ রহমানের মত সকল মুসলিম যুব সমাজের সকলকে ওয়াক্তমত নামাজ পড়া উচিৎ।ওয়াক্ত মত নামাজ পড়লে বিভিন্ন দূর্ঘটনা থেকে যুব সমাজ রেহাই পেতে পারবে এবং এসব যুব পরিবারগুলো দুঃচিন্তামুক্ত থাকতে পারবে।আসুন আমরা সকল মুসলিম ভাই-বোনেরা ওয়াক্তমত নামাজ পড়ি এবং সময়মত বাসায় ফিরি।এই লেখাটি লিখেছেনঃ-                                                                                                                                                                                      মোঃ আমিনুল ইসলাম বুলবুল।                                                                                                                                                                                                                                             ধন্যবাদ

No comments: